জমির পর্চা কিভাবে বের করব

জমির পর্চা কিভাবে বের করব

জমির খতিয়ান কি? 

খতিয়ান একটি ফার্সি শব্দ । ভূমির মালিকানা পরিচিতি লাভের জন্য যে নথি প্রস্তুত করা হয় তাই খতিয়ান বা পর্চা । খতিয়ান মূলত ভূমির হিসাব । 

সরকারিভাবে ভূমি জরিপের সময় বিভিন্নধাপে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬২ (সংশোধিত), দাগের বর্ণনাসহ ভূমি মালিকানা নির্ধারণের যে নথি প্রকাশ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে । 

খতিয়ান কত প্রকার ? 

জরিপকাল ও সময়ভেদে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের খতিয়ান প্রস্তুত হয়েছে- তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:-(১) সি এস খতিয়ান  (২) এস এ খতিয়ান 

(৩) আর এস খতিয়ান (৪)  বি এস খতিয়ান 

কীভাবে পর্চা বা খতিয়ান বের করবেন ?

১. পর্চা বা খতিয়ান। 

২. দলিল। 

৩. ম্যাপ বা নকশা।

এই ডকুমেন্টগুলো ছাড়া আপনি জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। ব্যাংক লোন নিতেও নানান সমস্যা হয়।

তাই জমির খতিয়ান, দলিল সহ সকল কাগজপত্র সংগ্রহে রাখার জন্য সরকারি নানান দপ্তর রয়েছে, যারা ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখে। এখন আপনার কাজ হলো ঐ সকল দপ্তরগুলো কে নিশ্চিত করে তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র গুলো সংগ্রহ করা।

কোথায়, কীভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে আপনি জমির খতিয়ান দলিল ও নকশা সংগ্রহ করতে পারবেন তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

প্রথমত- আপনার জমির খতিয়ান বা পর্চা কোথায় পাবেন

জমির পর্চা বা খতিয়ান মূলত চারটি অফিসে পাবেন-

১/ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

২/উপজেলা ভূমি অফিস।

৩/জেলা ডিসি অফিস।

৪/সেটেলমেন্ট অফিস।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিসঃ

ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যদিও খতিয়ান বা পর্চার বালাম বহি থাকে কিন্তু আপনি এই অফিসে হতে খতিয়ানের কপি নিতে পারবেন না। ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে শুধু খসড়া খতিয়ান নিতে পারবেন যেটা আইনত কোন মূল্য নেই তারপরেও এই অফিসটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার জমির খতিয়ান নাম্বার জানা না থাকলে এই অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর এই অফিসে দিতে হয়।

উপজেলা ভূমি অফিসঃ

যদিও উপজেলা ভূমি অফিসের মূল কাজ নামজারী বা খারিজ বা মিউটেশন করা তবে খসড়া খতিয়ান তুলতে পারবেন। এই অফিস হতেও খতিয়ানের সার্টিফাইড পর্চা বা কোর্ট পর্চা তুলতে পারবেন না।

জেলা ডিসি অফিসঃ

এই অফিস হতে পর্চা বা খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই অফিসের খতিয়ান এর গুরুত্ব সর্বাধিক। সব জায়গায় এই অফিসের খতিয়ান এর গুরুত্ব রয়েছে।

সেটেলমেন্ট অফিস

শুধুমাত্র নতুন রেকর্ড বা জরিপের পর্চা / খতিয়ান এই অফিস হতে সংগ্রহ করা যাবে।

পাশাপাশি নতুন রেকর্ড এর ম্যাপ ও সংগ্রহ করা যায়।

খতিয়ান তুলতে কত টাকা লাগবে?

সি এস, এস এ, আর এস, এর জন্য কত টাকা দিতে হবে তা নির্ভর করে ঐ স্থানের সিন্ডিকেটের উপর। তবে সিটি জরিপের জন্য ১০০ টাকা খরচ হবে। বর্তমানে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ১০০ টাকার বিনিময়ে অনলাইন কপি ও সার্টিফাইড কপি পেতে পারেন।

দ্বিতীয়ত- আপনার জমির দলিল বা বায়া দলিল কোথায় পাবেন?

দলিলের সার্টিফাইড কপি বা অবিকল নকল মূলত দুটি অফিস হতে সংগ্রহ করা যায়-

১/উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।

২/জেলা রেজিস্ট্রি বা সদর রেকর্ড রুম অফিস।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসঃ

যেখানে নতুন দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয় এই অফিস হতে নতুন দলিলের নকল ও মূল দলিল পাওয়া যায়। কিন্তু পুরাতন দলিল বা বায়া দলিল এই অফিসে পাওয়া যায় না।

জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুমঃ

এই অফিসে নতুন বা পুরাতন দলিলের সার্টিফাইড কপি বা নকল পাওয়া যায়।

দলিল তুলতে কত টাকা খরচ হয়?

উত্তরঃ সরকারি খরচ যদিও সামান্য কিন্তু নকলের খরচ নির্ভর করে ঐ স্থানের সিন্ডিকেটের উপর।

জমির মৌজা ম্যাপ বা নকশা কোথায় পাবেন?

সাধারণত ম্যাপ বা নকশা দুইটি অফিসে পাবেন-

১/জেলা ডিসি অফিস

২/ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর (DLRS), ঢাকা।

জেলা ডিসি অফিসঃ

এই অফিস হতে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস যেকোনো মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা যাবে।

সংগ্রহ করতে যা লাগবে আবেদন ফরম +২০ টাকার কোর্ট ফি এবং ৫০০ টাকা নগদ জমা বাবদ বা ডি.সি.আর বাবদ। অর্থাৎ ৫৩০ টাকায় মৌজা ম্যাপ তুলতে পারবেন।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, (তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়), ঢাকাঃ

সারা বাংলাদেশের যে কোনো মৌজা ম্যাপ সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, জেলা ম্যাপ, বাংলাদেশ ম্যাপ উক্ত অফিস হতে তুলতে পারবেন।

এই অফিসের ম্যাপের গ্রহণযোগ্যতা ও অনেক বেশি। সারা বাংলাদেশের যে কোন ম্যাপ এই অফিসে পাওয়া যায়। ম্যাপ তুলতে খরচ আবেদন ফরম + কোর্ট ফি + ডি.সি.আর মোট= ৫৫০/= টাকা মাত্র। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করে ডাক সেবার মাধ্যমে ডাক মাশুল সহ ৬৩০ টাকায় ম্যাপ পাওয়া যায়।

ম্যপ তুলতে কতদিন সময় লাগে?

উত্তরঃ ম্যানুয়ালি আবেদন করার দিন হতে, ৫-৮ কার্য দিবসের ভিতরে ম্যাপ পাবেন।


ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url