প্রথমেই জেনে নেই নামজারী কি?
নামজারী খতিয়ান হলো জমির মালিকের নামে নতুন মালিকানা রেকর্ড, যেখানে জমির মালিকানা হস্তান্তরের পর (দলিল রেজিস্ট্রেশন বা উত্তরাধিকার সূত্রে) নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সহজভাবে বললে:-
-
জমি কেনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার পর আপনার নাম সরকারি খতিয়ানে যোগ করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলে ।
-
জমির পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নামজারীর মাধ্যমে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
-
যে কাগজে নতুন মালিকের নামসহ হালনাগাদ জমির তথ্য লেখা থাকে তাকেই বলে নামজারী খতিয়ান।
নামজারী খতিয়ানে যা থাকে:
-
জমির মালিকের নাম
জমির পরিমাণ (একর/শতক/গন্ডা অনুযায়ী)
-
মৌজা ও দাগ নম্বর
-
জমির শ্রেণী (বসতভিটা, কৃষিজমি ইত্যাদি)
-
খাজনা বা ট্যাক্স সংক্রান্ত তথ্য
👉 মূলত এই নামজারি খতিয়ানই প্রমাণ করে আপনি জমির বৈধ মালিক এবং ভবিষ্যতে জমি বিক্রি, বন্ধক, লোন নেওয়া কিংবা উত্তরাধিকার বণ্টনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজ।
নামজারি (জমির মালিকানা খতিয়ানে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করা) করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র লাগে। সাধারণত নামজারি আবেদন করার সময় নিচের কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হয়-
নামজারী করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
-
নামজারী আবেদনপত্র (নির্ধারিত ফরমে)
-
দলিল (রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মূল কপি বা সত্যায়িত কপি)
-
খতিয়ান / খাজনার রশিদ (সর্বশেষ খাজনা পরিশোধের রশিদ)
-
মৌজা ম্যাপ / নকশা (যদি প্রয়োজন হয়)
-
অভিভাবকের সম্মতি / ওয়ারিশ সনদ (উত্তরাধিকার সূত্রে নামজারী হলে)
-
দলিল লেখক ও সাক্ষীদের নাম-ঠিকানা (কিছু ক্ষেত্রে দরকার হয়)
-
জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্ম নিবন্ধন সনদ (আবেদনকারীর পরিচয়ের জন্য)
-
প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি / ট্রেজারি চালান (নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রশিদ সংযুক্ত করতে হবে)
বিশেষ ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজপত্রঃ
-
উত্তরাধিকারসূত্রে নামজারী → ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ।
-
ক্রয়সূত্রে নামজারী → রেজিস্ট্রিকৃত ক্রয় দলিল।
-
দখলসূত্রে নামজারী → দখলের প্রমাণ (সাক্ষী/প্রমাণপত্র)।
-
দানের মাধ্যমে নামজারী → দানপত্র দলিল।
👉 নামজারী সাধারণত সহকারী কমিশনার (ভূমি) / AC Land অফিসে করতে হয়।
নামজারী কেন করা জরুরি তা অনেকেই জানেন না। আসলে নামজারী জমির মালিকানার সরকারি প্রমাণ।
নামজারী করার প্রধান কারণগুলোঃ
-
মালিকানা প্রমাণের জন্য
-
জমি কেনা বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়ার পর আপনার নাম যদি খতিয়ানে না ওঠে, তবে আইনগতভাবে আপনি সেই জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃত হবেন না।
-
নামজারী খতিয়ানই হচ্ছে মালিকানার সরকারি রেকর্ড।
-
-
খাজনা বা কর দেওয়ার জন্য
-
জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) দিতে হলে আপনার নামে নামজারী থাকা প্রয়োজন।
-
খাজনা না দিলে জমি নিয়ে ভবিষ্যতে আইনি সমস্যা হতে পারে।
-
-
জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের জন্য
-
জমি বিক্রি করার আগে খতিয়ানে আপনার নাম থাকতে হবে, না হলে পরের ক্রেতা নামজারী করতে পারবে না।
-
ফলে জমি বিক্রির সময় ঝামেলা এড়াতে নামজারী জরুরি।
-
-
ঋণ বা ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য
-
ব্যাংক থেকে জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে হলে খতিয়ান ও খাজনার রশিদ দেখাতে হয়।
-
নামজারী না থাকলে ব্যাংক জমি গ্রহণ করবে না।
-
-
ভবিষ্যৎ বিরোধ এড়ানোর জন্য
-
পরিবার বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে জমি নিয়ে ঝগড়া এড়াতে নামজারী করা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
-
এতে পরিষ্কার বোঝা যায় জমির আসল মালিক কে।
-
👉 সংক্ষেপে বলা যায়, নামজারি না করলে জমির আসল মালিক হিসেবে আপনাকে সরকার স্বীকৃতি দেবে না।
খাস জম নামজারী হয় কি না?
👉 খাস জমি হচ্ছে সরকারের মালিকানাধীন জমি। সাধারণত নদীভাঙন, খাল-বিল, পতিত জমি, পরিত্যক্ত জমি ইত্যাদি রাষ্ট্রের নামে নথিভুক্ত থাকে। তাই এই জমি ব্যক্তিগতভাবে কেনা-বেচা বা নামজারী করা যায় না।
তবে কিছু ক্ষেত্রে নামজারি সম্ভব:
-
যদি সরকার কারও কাছে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়
-
ভূমিহীন পরিবারকে সরকার খাস জমি বন্দোবস্ত (লিজ/পট্টা) দিয়ে থাকে।
-
এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বন্দোবস্তের দলিল থাকলে নামজারী করা যায়।
-
-
কোনো প্রকল্প বা পুনর্বাসনের আওতায় জমি দেওয়া হলে
-
যেমন আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে খাস জমি বিতরণ করা হয়।
-
সেই জমির মালিকানা কাগজপত্র অনুযায়ী নামজারী করা হয়।
-
-
সরকারি বন্দোবস্ত দলিল ও অনুমোদন ছাড়া
-
খাস জমিতে অবৈধভাবে বসবাস বা দখল করে থাকলে নামজারী করা যায় না।
-
কোনো ব্যক্তি খাস জমি কিনলেও তা বৈধ নয়, রেজিস্ট্রি বা নামজারী হবে না।
-
⚠️ তাই সংক্ষেপে: খাস জমি সরাসরি নামজারি হয় না। শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক বন্দোবস্ত/লিজকৃত খাস জমির বৈধ কাগজ থাকলে নামজারি করা সম্ভব।