বাটোয়ারা দলিল কেন জরুরী?

বাটোয়ারা দলিলের প্রধান উদ্দেশ্য


বাটোয়ারা দলিল (Partition Deed) হল একটি আইনগত দলিল যা একাধিক ব্যক্তি বা অংশীদারদের মধ্যে কোনো সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা বা বন্টন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত একাধিক ব্যক্তি বা অংশীদারগণ একটি সম্পত্তি বা জমি সম্পর্কে একমত হয় যে তারা সেটা ভাগ করে নেবেন তখন সেটা বাটোয়ারা দলিলের মাধ্যমে ভাগ করে নেন ।

কেন বাটোয়ারা দলিল করতে হয় 

বাটোয়ারা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা, সীমানা এবং বন্টনের শর্তাবলী নির্ধারণ করা হয়। এতে সম্পত্তির মোট পরিমাণ, ভাগের অনুপাত এবং প্রতিটি অংশীদারের প্রাপ্য অংশ আলাদা আলাদা তফসিল আকারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। দলিলটি সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সই দ্বারা আইনগতভাবে বৈধ হয় এবং প্রয়োজনে রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশনও করা করা হয়ে থাকে ।

বাটোয়ারা দলিলের প্রধান উদ্দেশ্য:

১) সম্পত্তির বন্টন: এটি সম্পত্তির ভগ্নাংশ বা অংশের স্পষ্ট বণ্টন নিশ্চিত করে।

২) আইনগত বৈধতা: দলিলটি সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন বা বন্টন আইনগতভাবে স্বীকৃত করে।

৩) অংশীদারীগণের দ্বন্দ্বের সমাধান: সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিরোধ থাকলে, বাটোয়ারা দলিলের মাধ্যমে এটি তা নিরসনে সহায়ক হয়।

বাটোয়ারা দলিলে সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  • সম্পত্তির বিবরণ
  • প্রতিটি পক্ষের নাম এবং অংশের বিবরণ
  • বন্টন শর্তাবলী
  • প্রত্যেক পক্ষের অধিকার এবং দায়িত্ব
  • সাক্ষী এবং তাদের বিবরণ (যদি থাকে)

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সম্পত্তির বন্টনের জন্য ব্যবহৃত হলে আইনগত সুরক্ষা প্রদান করে।

বাটোয়ারা দলিল জরুরী কেন?

বাটোয়ারা দলিল করার প্রয়োজন মূলত সম্পত্তির মালিকানা এবং অধিকার স্পষ্ট করার জন্য। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগি বা বণ্টন সম্পর্কিত বিষয়গুলো সুরক্ষিত করে। এর কিছু প্রধান কারণ হলো:

১) আইনি মালিকানা প্রতিষ্ঠা: বাটোয়ারা দলিলের মাধ্যমে যেসব ব্যক্তির মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি করা হয়, তাদের মধ্যে আইনিভাবে মালিকানা পরিষ্কার হয়। এটি পরবর্তীতে যে কোনো আইনি জটিলতা এড়াতে সহায়ক।

২) বিতর্ক বা বিরোধ প্রতিরোধ: বাটোয়ারা দলিল করার মাধ্যমে সম্পত্তির ভাগকারীর মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা দ্বন্দ্ব দূর করা সম্ভব হয়, কারণ এতে অংশীদারদের অধিকার স্পষ্ট থাকে।

৩) উত্তরাধিকারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ: যদি সম্পত্তি পরবর্তী সময়ে কোন উত্তরাধিকারী পেয়ে থাকে, তবে বাটোয়ারা দলিলের মাধ্যমে তার অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এটি ভবিষ্যতে আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষা করে।

৪) আইনি প্রমাণ: বাটোয়ারা দলিল একটি লিখিত প্রমাণ, যা আদালতে বা অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় কাজে আসতে পারে। এটি সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা সম্পর্কিত যে কোনো আইনি দাবি বা বিরোধে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

৫) তহবিল বা সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন: পারিবারিক বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সম্পত্তি বা তহবিল সঠিকভাবে বণ্টন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলিলের মাধ্যমে এটি আইনসম্মত ও সুনির্দিষ্টভাবে সম্পন্ন হয়।

এই কারণগুলির জন্য বাটোয়ারা দলিল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন আইনি সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত করে।

বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি 

বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি (Partition Deed Registration) একটি আইনগত দলিল, যা সম্পত্তি বা জমি ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়। এটি সাধারণত বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে জমি বা সম্পত্তির মালিকানা ভাগ করে দেওয়া হয়, এবং এই দলিলের রেজিস্ট্রি করার মাধ্যমে তার বৈধতা নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশে বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি করার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রেজিস্ট্রি না করলে দলিলের আইনগত প্রভাব থাকে না।

বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র:

১) স্বাক্ষরিত বাটোয়ারা দলিল: সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা সম্পর্কিত একটি লিখিত দলিল, যেখানে জমির পরিমাণ, প্রতিটি পক্ষের অংশ ইত্যাদি নির্ধারিত থাকে।

২) পূর্ববর্তী দলিল: সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণের জন্য পুরনো দলিল (যেমন বিক্রয়, সেবা, পত্তন দলিল) প্রয়োজন।

৩) নামজারি/রেকর্ড: জমির নামজারি বা রেকর্ড প্রয়োজন, যাতে জানানো যায় যে জমি বা সম্পত্তি বর্তমান মালিকের কাছে আছে।

৪) পরিসংখ্যান: জমির পরিমাণ ও সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।

৫) আইনগত পরিচয়পত্র: দলিলের পক্ষগুলোর পরিচয় যাচাই করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট ইত্যাদি।

৬) শিশু বা অক্ষম পক্ষের জন্য অনুমতি (যদি প্রয়োজন হয়): কোন পক্ষ শিশু বা অক্ষম হলে, আদালতের অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে।

রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া:

১) দলিল প্রস্তুতি: প্রথমে বাটোয়ারা দলিলটি প্রস্তুত করতে হয়। এটি সাধারণত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে করা হয়।

২) রেজিস্ট্রার অফিসে জমা: দলিলটি রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে হয়। এখানে সংশ্লিষ্ট জমির রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য খরচ দেওয়া হয়।

৩) প্রত্যক্ষ সাক্ষী: দলিলের সঠিকতা নিশ্চিত করতে, কিছু সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে।

৪) রেজিস্ট্রেশন: দলিলটি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর, এটি একটি সরকারি দলিল হিসেবে স্বীকৃত হবে এবং দলিলের কপি আপনার হাতে আসবে।

রেজিস্ট্রি করা না হলে, সম্পত্তির মালিকানা স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন হতে পারে এবং ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!